রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট (Ratargul Swamp Forest)। এটি সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। রাতারগুল বনটি প্রায় ৩০,৩২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এই বিস্তৃর্ণ এলাকার ৫০৪ একর জায়গায় রয়েছে বন আর বাকি জায়গা ছোট বড় জলাশয়ে পূর্ণ। তবে বর্ষায় পুরো এলাকাটিকেই দেখতে একই রকম মনে হয়।

রাতারগুল ‘সিলেটের সুন্দরবন’ নামে খ্যাত। রাতারগুল জলাবন বছরে চার থেকে পাঁচ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। তখন জলে ডুবে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায়। অনেক পর্যটক রাতারগুলকে ‘বাংলাদেশের আমাজন’ হিসাবে অভিহিত করেন। বর্ষায় গাছের ডালে দেখা মিলে নানান প্রজাতির পাখি, আবার তখন কিছু বন্যপ্রাণীও আশ্রয় নেয় গাছের ডালে। এছাড়া শীতকালে রাতারগুলের জলাশয়ে বসে হাজারো অতিথি পাখির মেলা। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর (বর্ষার শেষের দিকে) পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

রাতারগুল একটি প্রাকৃতিক বন, স্থানীয় বন বিভাগ এখানে হিজল, বরুণ, করচ সহ বেশ কিছু গাছ রোপণ করেন। এছাড়াও এখানে চোখে পড়ে কদম, জালিবেত, অর্জুনসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির জলসহিষ্ণু গাছপালা। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ রাতারগুল বনের ৫০৪ একর জায়গাকে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে।

যেভাবে রাতারগুল যাবেন
ঢাকার গাবতলী, ফকিরাপুল এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সিলেটগামী বাসগুলো ছেড়ে যায়৷ গ্রীন লাইন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলি, এনা প্রভৃতি পরিবহনের এসি বাসের জনপ্রতি টিকেটের মূল্য বাস ভেদে ১,৪০০ থেকে ১,৫০০ টাকা। আর নন-এসি বাসের জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ৭০০ টাকা থেকে ৭৫০টাকা।

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সিলেট যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে। ঢাকা থেকে সিলেট ট্রেন টিকেট ভাড়া শ্রেণী অনুযায়ী ৩২০ থেকে ৯৫৫ টাকা পর্যন্ত। চট্টগ্রাম থেকেও ট্রেনে সিলেট যেতে পারবেন, পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন সপ্তাহে ৬ দিন চলাচল করে।

ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও সাচ্ছন্দে যেতে আকাশ পথকে বেছে নিতে পারেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান ঢাকা-সিলেট আকাশপথে চলাচল করে।

সিলেট থেকে রাতারগুল যাওয়ার উপায়
সিলেট শহর থেকে রাতারগুলের দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। তাই সিলেট থেকে সকালে রাতারগুল গিয়ে বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসা যায়। একসাথে কয়েকজন হলে সারাদিনের জন্য সিএনজি কিংবা লেগুনা ভাড়া করে নিতে পারেন। সারাদিনের জন্যে ভাড়া ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা লাগবে। আপনি চাইলে রাতারগুলের সাথে ভোলাগঞ্জ অথবা বিছনাকান্দি ঘুরে দেখতে পারেন। সিএনজি রিজার্ভ করতে অবশ্যই দামাদামি করে নিন। রাতারগুল ঢুকার জন্যে সরকারি ফি দিতে হয় এবং জঙ্গলে ঢুকার জন্য জেলেদের ছোট ছোট নৌকা পাবেন। একটি ছোট নৌকায় ৪-৫ জন বসা যায়। নৌকার ভাড়া ৭৫০ টাকা।

কোথায় থাকবেন
লালা বাজার এলাকায় ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত আবাসিক হোটেল ও রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাবেন। এছাড়া হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকতে পারবেন।

ভালো সার্ভিসের আবাসিক হোটেলের মধ্যে আছে হোটেল হলি গেইট, হলি ইন, লা ভিস্তা হোটেল, পানসি ইন, হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিটানিয়া হোটেল, ইত্যাদি। এসব হোটেলে থাকতে খরচ হবে ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। লাক্সারী হোটেল ও রিসোর্টের মধ্যে আছে নিরভানা ইন, হোটেল নূরজাহান গ্র্যান্ড, রোজ ভিউ হোটেল, নাজিমগর রিসোর্ট, গ্র্যান্ড প্যালেস সহ আরও কিছু হোটেল। প্রতি রাতের জন্যে খরচ হবে ৮,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা পর্যন্ত।

রাতারগুল ভ্রমণে সাবধানতা
বর্ষায় বন ডুবে যাওয়ার পর সাপ সাধারণত বিভিন্ন গাছের ডালে আশ্রয় নেয়, এই বিষয়ে সতর্ক থাকুন। এছাড়া এখানে জোঁকের উপদ্রবও আছে। যদি সাঁতার জানা না থাকে তবে লাইফ জ্যাকেট সাথে রাখুন। প্রয়োজনে ছাতা ও রেইনকোট নিয়ে নিন।

সিলেটের আরও দর্শনীয় স্থান
রাতারগুল ভ্রমণ ছাড়াও আশেপাশে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান গুলো হলো ভোলাগঞ্জ, বিছনাকান্দি, জাফলং, লালাখাল ও হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার ইত্যাদি।

শেয়ার করুন সবার সাথে